তনুর হত্যাকারী, গত বৈশাখের প্রকাশ্যে নারী নিপীড়নের অপরাধীদের অপরাধের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যে তারা ধরা পড়ে না অথবা তাদের শাস্তি হয় না – খুব অবাক লাগে, তাই না? এর পেছনে অনেক কারণ আছে, ঘরের কারণটাই বলি। এই যে ‘অপরাধী কে ধরিয়ে দাও! ধরিয়ে দাও’, ছবি শেয়ার করো, এই করো সেই করো বলে এতো চিল্লাই, এটা শুধু আপনি-আমি, মানে যারা অপরাধীদের চিনি না, তারাই চিল্লাই। যারা তাদের ব্যক্তিগত ভাবে চেনে, তারা কিন্তু অধিকাংশ চুপই থাকে। তাই অপরাধীরা ধরা পড়ে না। ঘর বাঁচাতে রাজ্য পুড়ে ছাই!
এই চুপ থাকা মানুষগুলোর দিকে আঙুল তুলে ‘অমানুষ’ বলা যৌক্তিক এবং সহজ। কিন্তু কখনো যদি পাশা উল্টে আমাদের তাদের জায়গায় দাঁড়াতে হয়, তখন আমরা ক’জন মনুষ্যত্ত্বের পরিচয় দিতে পারবো তার সন্দেহ আছে। আমরাও তো চুপই থাকি, তাই না?
– বাসে মেয়েটার বুকের দিকে যখন লোকটা পলকহীন তাকিয়ে থাকে, তখন ঘাঁড় ঘুরিয়ে আমরা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকি।
– যখন জুনিয়র মেয়েটার ফোন নম্বর কোন ‘ভাই’ চায়, তখন সার্কেল মেইনটেইন করতে মেয়েটার অনুমতি ছাড়া নম্বরটা দিয়েই দেই।
– সহপাঠির কাঁধের উপর ব্রার ফিতে টা দেখা গেলে এটা নিয়ে কথা বলতেই হয়, এসব ছাড়া আড্ডা জমে নাকি?
– ম্যাম ফিরে বোর্ড মোছার সময় পড়ার থেকে বেশী তার শরীরের আঁকর, দোল এর দিকে বেশী মনোযোগ দিয়েই ছাত্রত্ত্ব হালাল করে নিতে হয়। এমন একটু আধটু না করলে ‘ছেলে বড় হয়েছে’ প্রমাণ করা যায় কখনো!
– ব্রেক আপের পর বন্ধুটা তার সাবেক প্রেমিকার আপত্তিজনক ছবি দিয়ে ফেইসবুক ভাসিয়ে ফেলল। মেয়েটা আর চেনা কাউকে মুখ দেখালো না, বন্ধুটা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালো। আমরাও ‘কিছুই হয়নি’ ভাব ধরে চা-আড্ডা করলাম।
যতদিন আমরা এভাবে চুপ থাকবো, ততদিন তনুরা ধর্ষণের শিকার হবেই। মোম জ্বেলে ধর্ষকদের থামানো সম্ভব না যদি আমরা দিনের আলোতেও মুখ খুলতে না শিখি।
– কাজী রাহাতুল জান্নাত
 
	
 
                                        





 
                             
                            